শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৪৯ অপরাহ্ন
রবিন চৌধুরী- রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
রংপুর নগরীতে আদালত কর্তৃক বাতিলকৃত ভুয়া দলিল দিয়ে গোপনে একতরফা রায় নিয়ে মুলাটোল পাকার মাথা মোড়ে সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা করে। গত শনিবার (২ আগস্ট) সকালে দুই শতাধিক ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে অবৈধভাবে জমি দখলসহ ভুক্তভোগীদের মারপিট, ভাঙচুর ও লুটপাটের তান্ডব চালায় মশিউর নামের এক প্রতারক।
ওই সময়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পরে উভয় পক্ষকে দালিলিক কাগজপত্রসহ ঘটনার পরের দিন সন্ধ্যায় সেনা-অস্থায়ী ক্যাম্পে ডাক দিলে এতে ভুক্তভোগী আকিফুল এর লোকজন যথা সময়ে উপস্থিত হলেও প্রতিপক্ষের মশিউর গং উপস্থিত হতে টালবাহানা করে।
এভাবে একাধিকবার মশিউর রহমান ও তার প্রতিনিধিদের ডাকা সত্তেও মশিউর গং এর কেউ যোগাযোগ করেন না। ফলে সেনাবাহিনীর থানা কমান্ডার ও মেট্রোপলিটন থানা কর্তৃপক্ষ আকিফুল ইসলাম টুটুল এর সম্পত্তির দালিলিক কাগজপত্র যাচাই-বাছাই পূর্বক পর্যালোচনা করে আকিফুল ইসলাম টুটুলকে ওই সম্পত্তির মালিকানা নির্ণয় করে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে আকিফুল ইসলামকে তার সম্পত্তির স্থাপনার চাবি বুঝায় দেন। এবং মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় ভুক্তভোগি আকিফুল ইসলাম টুটুল বাদি হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
এছাড়াও আদালত কর্তৃক বাতিলকৃত ভুয়া দলিলের মাধ্যমে গোপনে একতরফা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে বিজ্ঞ আদালত পূর্বের আদেশ স্থগিত করেন। এঘটনায় বিজ্ঞ আদালতের রায় ও দালিলিক কাগজপত্র পর্যালোচনা সহ এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, রংপুর নগরীর মুলাটোল পাকার মাথা সংলগ্ন ডা. গিয়াস উদ্দিনের দুই স্ত্রীর মধ্যে বড় স্ত্রী সায়েরা বানুকে সরাসরি ১২ শতক জমি ক্রয় করে দেন। এরপর তিনি নিজ নামীয় ১২ শতক জমি তার ছোট স্ত্রী আয়শা আক্তারকে রেজিষ্ট্রি করে দেন। পরে আইডিয়াল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আকিফুল ইসলাম টুটুল ডাঃ গিয়াস উদ্দিনের ছোট স্ত্রী আয়শা আক্তারের ১২ শতক জমি রেজিষ্ট্রি দলিলমূলে ক্রয় করেন। এ ছাড়া ডা. গিয়াস উদ্দিনের বড় স্ত্রী সায়েরা বানুর মৃত্যুর পর তার একমাত্র মেয়ে রওশন পারভীন সানাউল্লা ১২ শতক জমি ওয়ারিশ ও উইল সূত্রে প্রাপ্ত হন।
পরে লন্ডন প্রবাসী রওশন পারভীন সানাউল্লা’র খালাতো বোন গুলশান নাসরীন চৌধুরী পাওয়ার অফ এ্যাটর্নিমূলে ১২ শতক জমি মো. আকিফুল ইসলাম টুটুলের স্ত্রী রংপুর নগরীর গুড়াতীপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা শায়লা পারভীনের কাছে দলিলমূলে বিক্রি করেন। যার মোট ২৪ শতক জমি কোতয়ালী থানার আলমনগর মৌজার জে.এলল নং-৯৬,সি.এস খতিয়ান নং-৫৭, এস.এ খতিয়ান নং-৫২, ডি.পি খতিয়ান নং-২৮৩৪ ও ৭৭৪৬ সাবেক দাগ নং-২৩০, হাল দাগ নং-৭ ও ১৫, খারিজ খতিয়ান নং-১৯৬৪৪ ও ১৬৯৩১। এদিকে আকিফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শায়লা পারভীন জমি ক্রয়ের পর থেকে বদরগঞ্জ উপজেলার নাটারাম এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মশিউর রহমান তার চাচার সম্পত্তি হিসেবে দাবি করে
কয়েকবার দখলের অপচেষ্টা চালায়। পরে আয়শা আক্তার মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করলে আদালত কর্তৃক তা বিচক্ষণতার সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মশিউর রহমানের ভুয়া দলিলের সিল-স্বাক্ষর জাল প্রমাণিত হয় এবং ২০২৩ সালে ভূয়া দলিল বলে। বিজ্ঞ আদালত তা বাতিল করে দেন। এবং ভুয়া দলিল সৃষ্টিকারী অভিযুক্ত মশিউর রহমান ৩ মাস জেল হাজতে কারাবন্দি ছিলেন।
পরবর্তীতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর মশিউর গোপনে রংপুর জেলা যুগ্ম জজ-১ম আদালত এর বাতিল কৃত দলিল দিয়ে হয়রানি মুলক আরো একটি মামলা করে একতরফা রায় নেয়। কিন্তু রায় পাওয়ার পর আদালতের কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে দুই শতাধিক ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনীসহ দেশীয় অস্ত্রে-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জমি দখলের চেষ্টা চালায় মশিউর। এছাড়াও আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্বেও বাতিলকৃত ভুয়া দলিলের মাধ্যমে গোপনে একতরফা রায়ের বিরুদ্ধে মো. আকিফুল ইসলাম টিটুল গত ৪ আগষ্ট আপিল করলে বিজ্ঞ আদালত পূর্বের আদেশ স্থগিত করে দেন সূত্রে জানা যায়।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী আকিফুল ইসলাম টুটুল বলেন,মশিউর রহমান ইতোমধ্যে ওই জমি তার বলে মুলাটোল এলাকার মুন্না ও মমতাজ বেগমসহ কয়েকজনের কাছে অর্থের বিনিময়ে বায়না রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছেন। অভিযুক্ত মশিউর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগি আকিফুল ইসলাম টুটুল আরো বলেন, এই জমি ক্রয়ের পর থেকে মশিউর রহমান তার সম্পত্তি দাবি করে দখলে নেওয়ার অপচেষ্টা করে। এর আগেও এলাকার গণমান্য ব্যক্তিবর্গ, থানা পুলিশ কয়েকদফা সালিশী বৈঠকে এই জমি তার বলে প্রমাণ করতে ব্যার্থ হয়। এসংক্রান্ত বিষয়ে জানতে মশিউর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ আতাউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।